Leonardo Phoenix A stroke is a serious health condition which 3
Featured Health & Wellness

স্ট্রোক: লক্ষণ চিহ্নিত করার সহজ পদ্ধতি “FAST

Leonardo Phoenix A stroke is a serious health condition which 3

স্ট্রোকের লক্ষণ এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা

স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, যেখানে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এটি দ্রুত শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ সময়মতো চিকিৎসা না হলে মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে, এমনকি প্রাণহানির ঝুঁকিও থাকে। স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত শনাক্ত করা এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নেওয়া রোগীর জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। স্ট্রোকের লক্ষণ চিহ্নিত করার জন্য সহজ একটি পদ্ধতি হলো “FAST” পদ্ধতি। এখানে FAST মানে হলো—Face (মুখ), Arms (বাহু), Speech (কথা), এবং Time (সময়)। এই ধাপগুলো মেনে সহজেই স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা সম্ভব।

স্ট্রোক কী এবং কেন এটি গুরুতর?

স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাবে মারা যেতে শুরু করে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে—রক্তনালির মধ্যে ব্লকেজ, জমাট বাঁধা রক্ত, বা মস্তিষ্কে রক্তপাতের কারণে। যখন মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেই অংশের নিয়ন্ত্রণাধীন শারীরিক কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ট্রোকের পরিণতিতে রোগীর চলাফেরা, কথা বলা, এমনকি চিন্তাভাবনাও প্রভাবিত হতে পারে।

তাই, স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা অপরিহার্য। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি স্থায়ী অক্ষমতা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

FAST পদ্ধতিতে স্ট্রোক চিহ্নিতকরণ

স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করতে “FAST” পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। এই চারটি ধাপে আপনি রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে স্ট্রোকের সম্ভাব্য লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারেন।

১. Face (মুখমণ্ডল): রোগীকে হাসতে বলুন। লক্ষ্য করুন তার মুখের একপাশ কি বেঁকে গেছে? স্ট্রোক হলে অনেক সময় মুখের এক পাশ নিস্তেজ হয়ে যায় এবং মুখ বেঁকে যায়। এটি স্ট্রোকের একটি প্রধান লক্ষণ।

২. Arms (বাহু): রোগীকে দুই হাত তুলতে বলুন। যদি একটি হাত তুলতে না পারে বা তুললেও তা নিচে নেমে যায়, তবে এটি স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ হতে পারে। স্ট্রোক হলে শরীরের একপাশ দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে একটি হাত বা পা ঠিকমতো কাজ করে না।

৩. Speech (কথাবার্তা): রোগীকে সাধারণ কিছু কথা বলতে বলুন, যেমন “আমার নাম বলুন” বা “আজ কী দিন?” যদি তার কথা জড়িয়ে যায় বা কথার স্বাভাবিক প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে, তবে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। স্ট্রোক হলে অনেক সময় রোগীর কথা অস্পষ্ট বা বিভ্রান্তিকর শোনায়।

৪. Time (সময়): স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত। প্রতিটি মিনিট মূল্যবান, কারণ দেরি হলে মস্তিষ্কের আরও বেশি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ৯৯৯ বা স্থানীয় জরুরি নম্বরে কল করুন এবং রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

 

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

উপরের FAST পদ্ধতিতে যদি কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্ট্রোক হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষ মারা যেতে শুরু করে, যা রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে। যদি রোগী হাসতে না পারে, দুই হাত তুলতে না পারে, বা তার কথা স্পষ্ট না হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অবহেলা করলে তা স্থায়ী অক্ষমতা বা মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই, যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া জরুরি। স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিত্সা সময়মতো পাওয়া গেলে মস্তিষ্কের ক্ষতি কমানো সম্ভব হয় এবং রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।

স্ট্রোক প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সঠিক জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, কারণ উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ রক্তনালির ক্ষতি করে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা যেমন ফ্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করে বেশি ফলমূল এবং সবজি খাওয়া, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির সুস্থতা বজায় রাখা যায়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

স্ট্রোক একটি মারাত্মক অবস্থা, কিন্তু FAST পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি এটি দ্রুত চিহ্নিত করতে পারেন এবং জীবন বাঁচানোর পদক্ষেপ নিতে পারেন। উপরের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীর জীবন রক্ষা করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।