একটি মাত্র ঔষুধ—২০৫০ সালের মধ্যে ৭ কোটির বেশি হৃদ্রোগজনিত মৃত্যু ঠেকাতে পারে
🔗 সূত্র: American College of Cardiology (ACC)
🗓️ প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫
একটি মাত্র ঔষুধ—যাতে স্ট্যাটিন, একাধিক উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন থাকে—এই সিংগেল-পিল কম্বিনেশন (SPC) থেরাপি ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ হৃদ্রোগজনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করতে পারে।
জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজিতে (JACC) প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ চমকপ্রদ তথ্য।
একটি ঔষুধে হতে পারে জীবন বাঁচানোর উপায়
বিশ্বজুড়ে মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকির মানুষের জন্য যদি এই থেরাপি সহজলভ্য করা যায়, তাহলে প্রায় ১৩ কোটি নতুন হৃদ্রোগের ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব।
SPC থেরাপি হৃদ্রোগ প্রতিরোধের পথকে সহজ ও কার্যকর করে তোলে।
গবেষণায় কী ছিল?
ডা. ডেভিড এ. ওয়াটকিনসের নেতৃত্বে গবেষকরা ১৮২টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেন।
তারা দুটি আলাদা মডেলে ফলাফল বিশ্লেষণ করেন—
1️⃣ টার্গেটেড মডেল: যারা আগে থেকেই চিকিৎসায় আছেন, তাদের মধ্যে সচেতনতা ও ওষুধের প্রতি আনুগত্য বাড়ানো।
2️⃣ পপুলেশন-বেসড মডেল: ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের মাঝে ব্যাপকভাবে SPC বিতরণ।
টার্গেটেড মডেল অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে ২.৯ কোটি মৃত্যু এবং ৫.১ কোটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হার্ট ফেইলিউর প্রতিরোধ সম্ভব।
অন্যদিকে, পপুলেশন বেসড মডেল দেখাচ্ছে, ৭.২ কোটি মৃত্যু ও ১৩ কোটি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব—এতে সময়ের আগেই মৃত্যুহার ৩% কমে আসবে।
সবচেয়ে বেশি উপকার পাবে এশিয়া
এই ওষুধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।
জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির ভিত্তিতে এখানেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও অসুস্থতা ঠেকানো যাবে।
কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে
SPC থেরাপিতে অ্যাসপিরিন থাকলে ডিজিনেস (মাথা ঘোরা) ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ব্লিডিংয়ের কিছু অতিরিক্ত ঘটনা ঘটতে পারে—যথাক্রমে ১৫ থেকে ৩৪ কোটি ডিজিনেস ও ২.৭ কোটি ব্লিডিংয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
তবে কিডনি সমস্যা, পেপটিক আলসার, হেমোরেজিক স্ট্রোক বা অন্য কোনো বড় মৃত্যু ঝুঁকির আশঙ্কা গবেষণায় দেখা যায়নি।
যদি এখনই কিছু না করা হয়?
গবেষকদের মতে, যদি বর্তমান অবস্থা ঠিক রাখি, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে ১০ কোটি মৃত্যু এবং ২৫ কোটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হার্ট ফেইলিউর প্রতিরোধ করা যাবে না।
SPC থেরাপি শুধু হৃদ্রোগ নয়—স্মৃতিভ্রংশ, ডিমেনশিয়া ও কিছু ক্যান্সারও কমাতে পারে।
কী বাধা আছে বাস্তবায়নে?
একটি সম্পাদকীয় মন্তব্যে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু ওষুধ থাকলেই হবে না।
➡️ প্রয়োজন স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা প্রোটোকল
➡️ নার্স ও কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের দিয়ে ওষুধ দেওয়া
➡️ সরকারি উদ্যোগে ওষুধ সরবরাহ ও দামের নিশ্চয়তা
গবেষকরা বলেন, সারা বিশ্বে SPC থেরাপি ছড়িয়ে দিতে হলে বড় আকারে উৎপাদন, বাজারে প্রবেশের বাধা দূরকরণ এবং সক্রিয় নীতি প্রয়োজন।
শেষ কথা:
একটি বড়ি দিয়ে যদি কোটি কোটি জীবন বাঁচানো যায়—তবে এটাই হতে পারে ভবিষ্যৎ হৃদ্রোগ চিকিৎসার সবচেয়ে বড় মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ।
বিশ্বজুড়ে যদি এখনই প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তাহলে ২০৫০-এর আগেই দেখা মিলবে এর বাস্তব ফলাফলের।