হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে কী করবেন বিশেষজ্ঞদের নতুন রোডম্যাপ (1)
Featured Health & Wellness

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে কী করবেন? বিশেষজ্ঞদের নতুন রোডম্যাপ

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে কী করবেন বিশেষজ্ঞদের নতুন রোডম্যাপ (1)

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে কী করবেন? বিশেষজ্ঞদের নতুন রোডম্যাপ

🔗 সূত্র: Medscape | প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষস্থানীয় কার্ডিওলজি সংস্থা সম্প্রতি এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে—হৃদ্‌যন্ত্রের অকার্যকারিতা বা হার্ট ফেইলিউর এখন প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ।

হার্ট ফেল প্রতিরোধে এখন থেকেই সতর্কতা দরকার

হার্ট ফেল বা হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রমাগত দুর্বলতা সাধারণত অনেক বছর পর লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকি চিহ্নিত করে বহু আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।

এই ঘোষণা দিয়েছে হার্ট ফেলিওর সোসাইটি অব আমেরিকা (HFSA) এবং আমেরিকান সোসাইটি ফর প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি (ASPC)

তারা বলছেন, এটি একটি আজীবনের সচেতনতার বিষয়। শুরুর পর্যায়ে ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। একইসঙ্গে যারা আগে থেকেই আক্রান্ত, তাদের জন্যও সঠিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত বাড়ছে হার্ট ফেল রোগীর সংখ্যা

CDC-এর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ হার্ট ফেল রোগে ভুগছেন। প্রতি বছর ৪.৫ লক্ষাধিক মৃত্যুর পেছনেও এই রোগ দায়ী। আশঙ্কাজনকভাবে, ২০৫০ সালের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে।

রক্ত ও প্রস্রাবের পরীক্ষাতেই ধরা পড়ে আগাম সংকেত

গবেষকেরা বলছেন, শরীরের উপর চাপের প্রভাব আগে থেকেই বোঝা যায় কিছু সহজ রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে। এই আগাম পরীক্ষা চিকিৎসকদেরকে রোগের গতিপথ থামাতে বা মন্থর করতে সাহায্য করতে পারে।

“এটা চিকিৎসকদের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা”

ড. মার্থা গুলাটি, এই বিবৃতির অন্যতম লেখক ও লস অ্যাঞ্জেলেসের স্মিড হার্ট ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ বলেন,

“আমরা এখন হৃদ্‌রোগ চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আগেভাগে ঝুঁকি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারলেই লাখো মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা যেন আর আলাদা আলাদা দিক নিয়ে কাজ না করে বরং রোগীর সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।

রোগ প্রতিরোধে ইন্টিগ্রেটেড কেয়ারের ওপর জোর

এই নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য—প্রতিরোধমূলক সেবার জন্য আরো বেশি আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা। এর মধ্যে রয়েছে হৃদ্‌পুনর্বাসন, পুষ্টি পরামর্শ ও মানসিক সহায়তা—যেগুলো আগের তুলনায় এখনো খুব কম ব্যবহৃত হয়।

একইসঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থার ভেতরে সংযোগ তৈরি করার কথাও বলা হয়েছে। প্রাইমারি কেয়ার, কার্ডিওলজি, কিডনি ও হরমোন বিশেষজ্ঞদের একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

“এই বিবৃতি আমাদের জন্য একটি কর্মপন্থা”

ড. অনুরাধা লালা-ত্রিনদাদে, নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ও এই বিবৃতির আরেক লেখক বলেন,

“আমরা যদি এখনই না জাগি, তবে হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর হার কমবে না। আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিকে মানুষের সামগ্রিক সুস্থতার দিকে মোড় নিতে হবে।”

তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ছাড়াও এখন জেনেটিক কারণ, পরিবেশগত প্রভাব ও জীবনযাপনের ধরণকেও ঝুঁকির মধ্যে ধরা দরকার।

প্রতিরোধই এখন মূল লক্ষ্য

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ও কলেজ অব কার্ডিওলজির মতে, উচ্চ রক্তচাপ হলো এক নম্বর প্রতিরোধযোগ্য ঝুঁকি—যা হৃদ্‌রোগ ছাড়াও কিডনি রোগ, স্মৃতিভ্রংশের জন্য দায়ী।
এ জন্য রোগীদের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন, ওষুধ গ্রহণ ও PREVENT রিস্ক ক্যালকুলেটর ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসার দিকনির্দেশনা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

শেষ কথা

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই কৌশলগুলো দেশে দেশে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে শুধু জীবন মানই নয়—জীবনকালও বাড়ানো সম্ভব হবে লাখ লাখ মানুষের জন্য।