দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ কেন এত বিপজ্জনক
Featured Health & Wellness

দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ কেন এত বিপজ্জনক

দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ কেন এত বিপজ্জনক

দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ কেন এত বিপজ্জনক

প্রায় প্রতিবারই ডাক্তারের চেম্বারে গেলে আগে রক্তচাপ মাপা হয়। কারণ, রক্তচাপ আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং ভবিষ্যতে গুরুতর অসুখের ঝুঁকি কতটা, তা অনেকটাই জানিয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সরাসরি হৃদ্‌রোগের সঙ্গে যুক্ত। তবে সুখবর হলো—রক্তচাপ কমানো গেলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

কেন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি

“আমরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করি মূলত স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির ক্ষতি ও হার্ট ফেল প্রতিরোধের জন্য,” বলেন কার্ডিওলজিস্ট ডা. লিউক লাফিন। তাঁর মতে, রক্তচাপ ১২০/৮০–এর নিচে থাকলে এসব প্রাণঘাতী ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। বিশেষ করে স্ট্রোক প্রতিরোধে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

রক্তচাপ কিভাবে কাজ করে

রক্তচাপ হলো ধমনীর দেয়ালে রক্তের চাপ। সাধারণভাবে স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিমি পারদ। যদি এর চেয়ে বেশি হয়, তবে হৃদ্‌পিণ্ডকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়।

ডাক্তাররা প্রথমে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে বলেন—যেমন ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, লবণ কম খাওয়া। কিন্তু রক্তচাপ যদি ১৩০/৮০ বা তার বেশি হয়, তখনই তা হাইপারটেনশন হিসেবে ধরা হয় এবং ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ আর হাইপারটেনশন কি একই?

অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ আর হাইপারটেনশনকে একই মনে করেন। আসলে তা নয়। মাঝে মাঝে মানসিক চাপ বা ব্যায়ামের কারণে রক্তচাপ বাড়লেও সেটি হাইপারটেনশন নয়। হাইপারটেনশন তখনই বলা হয় যখন একাধিকবার রক্তচাপ ১৩০/৮০–এর বেশি ধরা পড়ে।

কেন হয় হাইপারটেনশন

সবচেয়ে সাধারণ হলো প্রাইমারি হাইপারটেনশন। বয়স বাড়া ও বংশগত কারণে এটি হয়। বয়স ৮০–তে পৌঁছালে প্রায় ৯০% মানুষই এই সমস্যায় ভোগেন।
আরেক ধরনের হলো সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন, যা হয় অন্য কোনো রোগের কারণে। যেমন—কিডনির ধমনীর সমস্যা বা হরমোনের অসামঞ্জস্য।

শরীরের ক্ষতি করে কিভাবে

আমাদের হৃদ্‌পিণ্ড প্রতিদিন প্রায় ৮৬ হাজারবার স্পন্দিত হয়। যখন দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তখন হৃদ্‌পিণ্ড বড় হতে থাকে। কিন্তু বড় মানেই ভালো নয়। এতে রক্ত পাম্প করার শক্তি কমে যায় এবং হার্ট ফেল দেখা দেয়।

এছাড়া হৃদ্‌পিণ্ড শক্ত হয়ে যেতে পারে, ফলে প্রতিবার স্পন্দনের পর স্বাভাবিকভাবে রক্ত ভরতে পারে না। এটিও হার্ট ফেল ঘটায়।

উচ্চ রক্তচাপ ধমনীর ক্ষতি করে। এতে ধমনী দ্রুত বুড়িয়ে যায়, ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হতে পারে বা চর্বি জমে ব্লক তৈরি হয়, যা হার্ট অ্যাটাক ও ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, হাইপারটেনশন মস্তিষ্কে ছোট ছোট অদৃশ্য স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০% পর্যন্ত বাড়ায়।

কীভাবে ঝুঁকি কমানো যায়

প্রথমে ওষুধ ছাড়া কিছু পরিবর্তনেই নিয়ন্ত্রণ আনা যায়। যেমন—

  • কম অ্যালকোহল পান

  • কম লবণ খাওয়া (DASH ডায়েট)

  • নিয়মিত ব্যায়াম

  • ওজন কমানো

তবে ঝুঁকি বেশি হলে বা আগেই হার্ট অ্যাটাক/স্ট্রোক হয়ে থাকলে ওষুধের প্রয়োজন হয়। ডাক্তাররা বিভিন্ন ওষুধ মিলিয়ে সঠিক মাত্রা ঠিক করেন।

নীরব ঘাতক

হাইপারটেনশনকে বলা হয় “সাইলেন্ট কিলার”। কারণ, অনেক সময় কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তাই অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।