হৃদরোগের অন্যতম সাধারণ উপসর্গ হলো অ্যানজাইনা, যা বুকের ব্যথা বা অস্বস্তি হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহের ঘাটতির কারণে ঘটে এবং প্রায়ই শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময় দেখা দেয়। অ্যানজাইনা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে, তাই এর লক্ষণগুলো সঠিক সময়ে চিনতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, পুরুষ ও নারীর অ্যানজাইনার লক্ষণে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা প্রায়শই অজানা থেকে যায়।
নারী ও পুরুষ উভয়ের হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় একই হলেও তাদের অ্যানজাইনার লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে অ্যানজাইনার লক্ষণগুলো সাধারণত তীব্র এবং সহজেই সনাক্তযোগ্য যেমন, বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড চাপ বা সংকোচন। অন্যদিকে, নারীদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো কিছুটা মৃদু এবং কম স্পষ্ট হতে পারে যা প্রায়ই অবহেলা করা হয়। অনেক সময় নারীরা তাদের লক্ষণগুলোকে অন্য কোনো সমস্যার সাথে গুলিয়ে ফেলেন ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণে দেরি হয়ে যায়।
এখানেই প্রধান চ্যালেঞ্জ; নারীরা প্রায়শই হৃদরোগের ঝুঁকি বা অ্যানজাইনার লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেন না, কারণ তাদের লক্ষণগুলো পুরুষদের তুলনায় আলাদা ধরনের হতে পারে। এই পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন না হলে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে যা পরবর্তীতে মারাত্মক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো পুরুষ ও নারীদের অ্যানজাইনার লক্ষণের পার্থক্য এবং কীভাবে এই লক্ষণগুলো সঠিকভাবে সনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া যায়।
পুরুষ ও নারীদের অ্যানজাইনার সাধারণ লক্ষণ
পুরুষ ও নারীরা উভয়েই অ্যানজাইনার কিছু ক্লাসিক লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো বুকের মাঝখানে ব্যথা বা সংকোচনের অনুভূতি। এই ব্যথা ধীরে ধীরে চোয়াল, গলা, পিঠ বা পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও, শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময় এই ব্যথা বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্রামের পর কমে আসে।
অ্যানজাইনার ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে চাপ বা সংকোচনের মতো অনুভূত হয়, যেন কোনো ভারী কিছু বুকের উপর রাখা হয়েছে। অনেক সময় এটি শরীরের অন্যান্য অংশে, যেমন চোয়াল, গলা, বা বাহুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই এই ক্লাসিক লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে নারীদের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত বা ভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা পুরুষদের ক্ষেত্রে কম দেখা যায়।
নারীদের অ্যানজাইনার লক্ষণের বৈশিষ্ট্য
নারীদের ক্ষেত্রে অ্যানজাইনার লক্ষণগুলো পুরুষদের তুলনায় মৃদু হতে পারে, যা সনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। অনেক নারী অ্যানজাইনার সময় বুকের প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব না করলেও অন্য ধরনের উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। নারীদের মধ্যে লক্ষণগুলো নিম্নরূপ হতে পারে:
- বুকের মাঝখানে হালকা চাপ বা অস্বস্তি
- বমি ভাব বা মাথা ঘোরা
- ক্লান্তি বা দুর্বলতার অনুভূতি
- শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
নারীদের মধ্যে আরেকটি লক্ষণ হলো মাইক্রোভাসকুলার ডিজিজ, যেখানে হৃদপিণ্ডের ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। এটি অ্যানজাইনার ব্যথার ধরনকে ভিন্ন করে তোলে এবং পুরুষদের তুলনায় নারীদের জন্য এটি বেশি জটিল করে তোলে। মাইক্রোভাসকুলার ডিজিজের কারণে নারীরা প্রায়শই পুরুষদের তুলনায় কম তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন, কিন্তু এর ফলাফল অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে পারে।
পুরুষদের অ্যানজাইনার লক্ষণের বৈশিষ্ট্য
পুরুষদের অ্যানজাইনার লক্ষণগুলো প্রায়শই ক্লাসিক এবং সহজেই সনাক্তযোগ্য। পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা বা সংকোচনের অনুভূতি হয়, যা হাত, গলা, বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পুরুষেরা শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময় এই ব্যথা বেশি অনুভব করেন এবং বিশ্রামের পর এটি কমে আসে।
এছাড়াও, পুরুষেরা নারীদের তুলনায় বেশি ঘাম, বমি ভাব, এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। এই উপসর্গগুলো সাধারণত দ্রুত সনাক্ত করা যায় এবং তাই তাদের জন্য চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয়।
কেন এই পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ?
নারী ও পুরুষের অ্যানজাইনার লক্ষণগুলোর এই পার্থক্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা প্রায়শই তাদের ব্যথার ধরনকে কম গুরুত্ব দেন বা অন্য কোনো সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যান। এর ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে দেরি হয় যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে নারীদের মাইক্রোভাসকুলার ডিজিজের লক্ষণগুলো প্রায়শই সনাক্ত করা কঠিন হয়, যা তাদের হৃদরোগের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
নারীদের ক্ষেত্রে অ্যানজাইনার সনাক্তকরণে চ্যালেঞ্জ
নারীদের অ্যানজাইনা সনাক্ত করা বেশ কঠিন হতে পারে, কারণ তাদের লক্ষণগুলো প্রায়ই মৃদু এবং ভিন্ন ধরনের হয়। অনেক সময় নারীরা মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, বা দুর্বলতাকে হৃদরোগের লক্ষণ বলে মনে করেন না এবং অন্য কোনো সাধারণ সমস্যার সাথে মিশিয়ে নেন। এর ফলে চিকিৎসা গ্রহণে দেরি হয় এবং মারাত্মক ফলাফলের শিকার হতে হয়।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়ার গুরুত্ব
অ্যানজাইনার লক্ষণগুলো সময়মতো সনাক্ত করা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা জীবন বাঁচাতে পারে। পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই অ্যানজাইনার লক্ষণ দেখা দিতে পারে, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এর সনাক্তকরণ প্রায়শই কঠিন হয়ে পড়ে। বুকের ব্যথা বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা
নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই অ্যানজাইনার লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা প্রায়শই তাদের ব্যথার ধরন বা অন্য লক্ষণগুলিকে অবহেলা করেন, যা পরবর্তীতে মারাত্মক হৃদরোগের কারণ হতে পারে। তাই, নারীদের জন্য অ্যানজাইনার লক্ষণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য এবং সচেতনতা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
অ্যানজাইনা একটি গুরুত্বপূর্ণ হৃদরোগের সংকেত যা সঠিকভাবে চিনতে পারা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রে এর লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে তবে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো প্রায়শই মৃদু এবং কম পরিচিত তাই তাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সবার আগে নিজের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন এবং হৃদয়ের যে কোনো অস্বাভাবিক সংকেতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করুন।
Source: https://www.bhf.org.uk/informationsupport/conditions/angina#Heading2