হার্টের সমস্যা আমাদের সমাজে একটি ব্যাপক ও গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট। এর লক্ষণগুলি প্রায়ই অবহেলিত হয়, যা পরবর্তীতে গুরুতর জটিলতা ডেকে আনতে পারে। সুতরাং, এই সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী। তাই আজ আমরা হার্টের সমস্যা এবং তা নির্ণয় মাধ্যম সম্পর্কে জানবো ।
হার্টের সমস্যার লক্ষণ
হার্টের সমস্যা সাধারণভাবে হৃদয়ের ফাংশনে যে কোনো সমস্যা বোঝায়, এবং এই সমস্যাগুলি বিভিন্ন প্রকারের লক্ষণে প্রকাশ পায়। নিম্নলিখিত হল কিছু সাধারণ হার্টের সমস্যার লক্ষণ:
বুকে ব্যথা:
হার্টের সমস্যার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা। এই ব্যথা প্রায়শই বুকের মাঝখানে অনুভূত হয় এবং এটি চাপা, জ্বালাপোড়া, বা চিপা বোধের মতো অনুভূত হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট:
হার্ট ঠিকমতো কাজ না করলে, রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে যা শ্বাসকষ্ট ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় এটি সামান্য শারীরিক পরিশ্রমের পরও হতে পারে।
ক্লান্তি:
হার্টের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী ও অব্যাখ্যাত ক্লান্তির আকারে প্রকাশ পেতে পারে।
মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান:
রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে নিম্ন হলে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হতে পারে। এটি হার্টের সমস্যার একটি সূচক হতে পারে।
পায়ে ফোলা:
হার্ট ঠিকমতো কাজ না করলে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে, যা পায়ে ফোলা ডেকে আনতে পারে।
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন:
হার্টের সমস্যা থাকলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন অনুভূত হতে পারে, যেমন দ্রুত বা ধীর হৃদস্পন্দন।
এই লক্ষণগুলি প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে এবং সবসময় এগুলির অর্থ যে হার্টের সমস্যা আছে তা নয়। সুস্থ জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, ও সঠিক খাদ্যাভাস হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
হার্টের সমস্যা নির্ণয় করার প্রক্রিয়া:
হার্টের সমস্যা নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও পদ্ধতি রয়েছে। এই পরীক্ষাগুলি হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা, কাঠামো, এবং সম্পর্কিত রক্তনালীগুলির অবস্থান নিরীক্ষা করে।
নিম্নে হার্টের সমস্যা নির্ণয়ের কিছু প্রচলিত পদ্ধতির বিবরণ দেওয়া হলো:
১. ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG বা EKG):
এই পরীক্ষা হৃদস্পন্দনের প্যাটার্ন ও গতি নির্ণয় করে। এটি হৃদযন্ত্রের কোনো অনিয়মিততা বা স্ট্রেসের ইঙ্গিত দিতে পারে।
২. ইকোকার্ডিওগ্রাম:
একটি অত্যাধুনিক আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা, যা হৃদযন্ত্রের গঠন ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করে। এটি হার্ট ভালভসমূহের কার্যক্ষমতা ও হার্ট ওয়ালের গতিবিধি নির্ধারণ করে।
৩. স্ট্রেস টেস্ট:
এই পরীক্ষা ব্যায়াম বা ওষুধের সাহায্যে হৃদযন্ত্রের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করে। এটি হার্টের ব্লকেজ বা অন্যান্য সমস্যা নির্ণয়ে সাহায্য করে।
৪. হলটার মনিটরিং:
এক ধরনের পোর্টেবল ডিভাইস, যা একটানা ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত হৃদস্পন্দন রেকর্ড করে। এটি অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা অরিথমিয়া ধরতে সাহায্য করে।
৫. করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম:
এটি একটি বিশেষ এক্স-রে পরীক্ষা, যা হার্টের রক্তনালীগুলির অবস্থা পরীক্ষা করে। এটি ব্লকেজ বা সংকীর্ণতা নির্ণয় করে।
৬. ব্লাড টেস্ট:
রক্তের বিশেষ মার্কারগুলি, যেমন ট্রোপোনিন, হার্ট অ্যাটাক বা অন্যান্য হার্টের সমস্যা নির্ণয়ে সাহায্য করে।
উপরে উল্লেখিত পরীক্ষাগুলি হার্টের সমস্যা নির্ণয়ে সাহায্যকারী। তবে, কোন পরীক্ষা প্রয়োজন সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্থির করা হয়। নিয়মিত চেক-আপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। হার্টের সমস্যা নির্ণয় ও চিকিৎসা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য যথাযথ চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা অত্যন্ত জরুরী। কিংবা আমাদের (Cardiology Bangladesh) সাথে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ ।