11
Featured Health & Wellness

ব্যায়ামের সময় হার্ট অ্যাটাক কেন হয়? সতর্ক হোন আগেভাগেই

11

ব্যায়ামের সময় হার্ট অ্যাটাক কেন হয়? সতর্ক হোন আগেভাগেই

🔗 সূত্র: Continental Hospitals
📅 পর্যালোচনা করেছেন: ডা. কৃষ্ণ মোহন লালুকোটা | ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

অনেকেই মনে করেন ব্যায়াম মানেই স্বাস্থ্যকর জীবন। কিন্তু হঠাৎ করে ব্যায়ামের সময় হার্ট অ্যাটাক হলে তা হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী।

শারীরিক পরিশ্রমের সময় হার্টের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। যদি আগে থেকেই কোনো লুকিয়ে থাকা হৃদরোগ থাকে, তবে এই চাপ হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

ব্যায়ামের সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ

  • তীব্র বুকের ব্যথা বা চাপ

  • শ্বাসকষ্ট

  • মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা

  • বমি বমি ভাব

  • ব্যথা বাহু, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়া

এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যায়াম বন্ধ করে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে।

কী করবেন এমন পরিস্থিতিতে?

  • দ্রুত ব্যায়াম থামান।

  • অ্যাম্বুলেন্স বা হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করুন।

  • যদি অ্যালার্জি না থাকে, তাহলে একটি অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি রক্ত জমাট বাঁধা কমাতে সাহায্য করে।

  • যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং নাড়াচাড়া কম করুন।

ব্যায়ামের সময় কেন হার্ট অ্যাটাক হয়?

🔹 করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD):
হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে চর্বি জমে রক্তপ্রবাহ আটকে যেতে পারে। ব্যায়ামের সময় বাড়তি রক্তচাহিদা থাকায় ঝুঁকি বাড়ে।

🔹 প্ল্যাক ফেটে যাওয়া:
ধমনীতে জমে থাকা চর্বি হঠাৎ ফেটে গেলে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

🔹 হঠাৎ অতিরিক্ত চাপ:
অনিয়মিত শরীরচর্চা বা একেবারে হঠাৎ ভারী ব্যায়াম হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

🔹 উচ্চ রক্তচাপ:
অনিয়ন্ত্রিত হাই প্রেসার ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ব্যায়ামের সময় বিপজ্জনক হতে পারে।

🔹 হার্টের অস্বাভাবিক রিদম:
বিশেষত যারা আগে থেকে অ্যারিথমিয়া সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য ব্যায়াম সময় বড় বিপদ বয়ে আনতে পারে।

🔹 অজানা হৃদরোগ:
অনেকের অজান্তেই জন্মগত হৃদরোগ বা গঠনগত ত্রুটি থাকতে পারে, যা ব্যায়ামের সময় ধরা পড়ে।

🔹 জীবনধারাগত ঝুঁকি:
ধূমপান, স্থূলতা, অলস জীবন, খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?

  • আগে থেকেই হৃদরোগ আছে যাদের

  • পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে

  • বয়স বেশি যাদের

  • যারা আগে ব্যায়াম করতেন না, হঠাৎ করে শুরু করেছেন

  • ধূমপায়ী

  • উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল যাদের আছে

  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে

কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়?

ধীরে শুরু করুন:
একেবারে ভারী ব্যায়াম না করে ধীরে ধীরে সময় ও মাত্রা বাড়ান।

ওয়ার্ম-আপ ও কুল-ডাউন:
প্রতিবার ব্যায়ামের আগে হালকা গরম-আপ ও পরে ঠাণ্ডা করার সময় রাখুন।

নিজেকে জানুন:
শরীরের সীমা বুঝে ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া ভালো।

পানির অভাব নয়:
সঠিকভাবে জলপান করুন। পানিশূন্যতা হার্টের জন্য ক্ষতিকর।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
সুষম খাবার খান, পর্যাপ্ত ঘুমান, মানসিক চাপ কমান।

নিয়মিত চেকআপ:
হার্টের অবস্থা জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

সতর্ক থাকুন লক্ষণে:
উপসর্গ দেখলেই অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

কখন চিকিৎসা জরুরি?

যদি ব্যায়ামের সময় নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা দেয়—

  • বুক ধড়ফড় করা বা ব্যথা

  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

  • ঘাম, মাথা ঘোরা বা বমি ভাব

  • বাহু বা চোয়ালে ব্যথা

তাহলে তৎক্ষণাৎ ব্যায়াম থামিয়ে চিকিৎসা সহায়তা নিন। সময় নষ্ট করবেন না।

💡 মনে রাখুন, ব্যায়াম আমাদের হার্টের বন্ধু হলেও, সতর্কতা অবলম্বন না করলে তা হতে পারে মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। সঠিক নিয়ম, প্রস্তুতি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।