ডিজিটাল হেলথ: হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা এআই ও স্মার্ট প্রযুক্তি
সূত্র: আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি (ACC)
তারিখ: ১ জুলাই, ২০২৫
হৃদ্রোগ বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ও অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ। আধুনিক ওষুধে চিকিৎসায় অগ্রগতি হলেও এখনো সবার কাছে পৌঁছানো এবং সঠিক ফল পাওয়া অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
এবার সামনে এসেছে ডিজিটাল হেলথ টেকনোলজি (DHTs)। এর মধ্যে আছে রোগীকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ, ভার্চুয়াল চিকিৎসা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে ডেটা বিশ্লেষণসহ নানা আধুনিক ব্যবস্থা। এগুলো ভবিষ্যতে হৃদ্রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ডিজিটাল হেলথের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, DHTs হৃদ্রোগ চিকিৎসায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এখনো এর কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য নেই। বড় ট্রায়াল বা দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ছাড়া এগুলো পুরোপুরি চিকিৎসায় যুক্ত করা কঠিন।
তবুও প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি—বিশেষ করে এআই—চিকিৎসাকে বদলে দিচ্ছে। নতুন ডেটা, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং বিকল্প সূচক ব্যবহার করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা।
এআই ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ভূমিকা
মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) ইতোমধ্যে প্রায় ১,০০০ এআই-ভিত্তিক চিকিৎসা ডিভাইস অনুমোদন দিয়েছে। তবে এগুলোর সীমাবদ্ধতা আছে। সবসময় বৈচিত্র্যময় রোগীর ওপর পরীক্ষা হয় না, ফলে অনেক সময় ফল সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় “ফেডারেটেড লার্নিং” পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার ডেটা একত্রিত করে এআইকে আরও নির্ভুল করা সম্ভব হবে।
বাস্তব উদাহরণ
অ্যাপল হেলথ স্টাডি এর একটি বড় দৃষ্টান্ত। প্রায় ৪ লাখের বেশি মানুষকে নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, স্মার্টওয়াচ দিয়ে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত স্পন্দন) শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর নির্ভুলতা ছিল ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত। পরে ACC ও আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইনে স্মার্টওয়াচ ও ওয়্যারেবল ডিভাইস ব্যবহারকে সুপারিশ করা হয়।
নতুন দিক ও ভবিষ্যৎ
FDA এখন বাস্তব জীবনের ডেটা (Real-World Data) ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে সময় কম লাগছে এবং নতুন চিকিৎসা যন্ত্র দ্রুত রোগীর কাছে পৌঁছাচ্ছে।
এছাড়া রিমোট কেয়ার নিয়েও আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। যেমন, ২০১৮ সালে TIM-HF2 স্টাডি প্রমাণ করেছে—যদি দূর থেকে পর্যবেক্ষণ সরাসরি চিকিৎসক দলের সাথে যুক্ত থাকে, তবে রোগীর ফলাফল ভালো হয়।
চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
তবে সবকিছুর পরও কিছু সমস্যা আছে। অনেক ডিজিটাল হেলথ অ্যাপ চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে একীভূত হয় না। ব্যবহার সহজ না হলে রোগী ও চিকিৎসক কেউই আগ্রহী থাকেন না।
তাই প্রয়োজন আরও কার্যকর নকশা, সহজ ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস এবং চিকিৎসকদের আস্থা। চিকিৎসা নীতিমালায় নতুন পথ তৈরি না হলে এসব প্রযুক্তি পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডিজিটাল হেলথ টেকনোলজি শুধু হৃদ্রোগ চিকিৎসায় নয়, প্রতিরোধ ও পর্যবেক্ষণেও বড় ভূমিকা রাখবে। তবে এজন্য দরকার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ, সঠিক নিয়মকানুন, চিকিৎসায় সহজ একীভূতকরণ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ।
এগুলো নিশ্চিত করা গেলে হৃদ্রোগ চিকিৎসায় শুরু হবে এক নতুন যুগ।