DALL·E 2024 09 17 12.37.55 An emotional scene of parents Sumna and Raihan holding their newborn child, facing the reality of congenital heart disease. The parents show mixed emo
Health & Wellness

সন্তানের কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ: সুমনা ও রায়হানের অভিজ্ঞতা

DALL·E 2024 09 17 12.37.55 An emotional scene of parents Sumna and Raihan holding their newborn child, facing the reality of congenital heart disease. The parents show mixed emo

সুমনা ও তার স্বামী রায়হানের প্রথম সন্তানের আগমনের জন্য তারা ছিলেন অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। গর্ভাবস্থার প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাছে ছিল আনন্দের। তবে সন্তান জন্মের পর যখন তারা জানতে পারল যে তাদের সন্তানের হৃদপিন্ডে সমস্যা রয়েছে তখন তাদের আনন্দ মুহূর্তেই শঙ্কায় পরিণত হয়। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর জানা গেল যে তাদের সন্তান কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে (CHD) আক্রান্ত। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে নবজাতকের হৃদপিণ্ডের গঠনগত সমস্যা থাকে। এই সমস্যা গর্ভাবস্থার প্রথম ছয় সপ্তাহ ধরে শিশুর হৃদপিণ্ড গঠনের সময় তৈরি হয়। যেমনটি সুমনা ও রায়হান জানতে পেরেছিলেন, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যার কিছু প্রকারভেদ সহজেই নিরাময়যোগ্য, তবে কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।

কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ কী?

কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ (Congenital Heart Disease) হলো একটি জন্মগত হৃদরোগ যা নবজাতকের হৃদপিণ্ডের গঠনে ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থার প্রথম ছয় সপ্তাহের মধ্যে, যখন নবজাতকের হৃদপিণ্ড তৈরি হয়, তখন এই ত্রুটি সৃষ্টি হতে পারে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এই ত্রুটি কোনো বিশেষ লক্ষণ প্রকাশ করে না এবং জীবনের অন্যান্য কার্যক্রমে তেমন প্রভাব ফেলে না তবে কিছু কিছু সময় এই ত্রুটি এতটাই গুরুতর যে তা জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং যার কারণে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের প্রকারভেদ
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে যা হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন অংশের উপর প্রভাব ফেলে। নিচে এই রোগের কয়েকটি সাধারণ প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (ASD):

অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (ASD) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ডের দুটি উপরের চেম্বারের (আট্রিয়া) মধ্যে একটি ছোট ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রের কারণে অক্সিজেনবিহীন রক্ত এবং অক্সিজেনযুক্ত রক্ত মিশে যায়, যা সঠিকভাবে হৃদপিণ্ডের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। ASD যদি বড় আকারের হয় তবে তা রক্ত প্রবাহের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে শ্বাসকষ্ট, অবসাদ এবং হৃদস্পন্দনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কাওয়াসাকি ডিজিজ:

কাওয়াসাকি ডিজিজ মূলত একটি তীব্র প্রদাহজনিত অবস্থা যা রক্তনালীর প্রদাহের মাধ্যমে শিশুদের হৃদপিণ্ডকে প্রভাবিত করে। এটি শিশুর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং এ রোগটি সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। কাওয়াসাকি ডিজিজের সঠিক কারণ এখনও অজানা, তবে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে এর জটিলতা কমানো সম্ভব।

পালমোনারি এট্রেসিয়া:

পালমোনারি এট্রেসিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ডের পালমোনারি ভালভ (যা রক্তকে ফুসফুসের দিকে পাঠায়) অনুপস্থিত থাকে অথবা সঠিকভাবে কাজ করে না। এর ফলে হৃদপিণ্ডের ডান দিকের চেম্বার থেকে রক্ত ফুসফুসে যেতে পারে না, যার ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং শিশুর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

পালমোনারি ভালভ স্টেনোসিস:

পালমোনারি ভালভ স্টেনোসিস হলো পালমোনারি ভালভের সংকোচন বা সরু হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এই সংকোচনের কারণে রক্ত ফুসফুসে প্রবাহিত হতে সমস্যায় পড়ে। যদি সংকোচন তীব্র হয়, তবে হৃদপিণ্ডের ডান দিকের চেম্বারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমাতে পারে এবং শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।

ট্রাইকাসপিড অ্যাট্রেসিয়া:

ট্রাইকাসপিড অ্যাট্রেসিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ডের ডান দিকের নিচের চেম্বারের (ভেন্ট্রিকল) সঙ্গে ডান উপরের চেম্বারের সংযোগ থাকা উচিত কিন্তু তা নেই। এই অবস্থায়, রক্ত প্রবাহে সমস্যা হয় এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরে পৌঁছাতে পারে না। এর ফলে শিশুতে শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি দেখা দেয়।

ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট:

ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট হলো হৃদপিণ্ডের দুটি নীচের চেম্বারের (ভেন্ট্রিকল) মধ্যে একটি ছিদ্র যা রক্তকে মিশ্রিত করে। এই ছিদ্র ছোট হলে তা স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু যদি ছিদ্র বড় হয়, তবে তা হৃদপিণ্ডে উচ্চ চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ফুসফুসে অপ্রয়োজনীয় রক্ত প্রবাহ ঘটাতে পারে।

কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ (CHD) একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক হৃদরোগ যা জন্মগতভাবে নবজাতকের হৃদপিণ্ডে বিভিন্ন প্রকার ত্রুটি বা সমস্যা সৃষ্টি করে। এই রোগের প্রভাব শিশুর জীবনের মানের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। তাই, নবজাতকের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং যেকোনো সন্দেহজনক লক্ষণের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।