হৃদরোগ বাংলাদেশে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, হৃদরোগ বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ। হৃদরোগের ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং ধূমপান। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং হৃদরোগের ঝুঁকি
মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, যেমন বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং চাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হৃদরোগের ঝুঁকি 50% বেশি। উদ্বেগ এবং চাপও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। প্রথমত, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের মতো হৃদরোগের ঝুঁকির কারণগুলির বিকাশে অবদান রাখতে পারে। দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা কঠিন করে তুলতে পারে, যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি ঔষধ মেনে চলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশের প্রায় 10% মানুষ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। উদ্বেগ এবং চাপও বাংলাদেশে খুবই সাধারণ। বাংলাদেশে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলির চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং চাপের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরণের থেরাপি এবং ঔষধ পাওয়া যায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি কীভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়?
- জৈবিক প্রক্রিয়া: মানসিক চাপ শরীরে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এসব পরিবর্তনগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অস্বাস্থ্যকর জীবনধারন: মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা কঠিন করে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অনীহ থাকতে পারেন। এই অভ্যাসগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ঔষধ মেনে চলার সমস্যা: কিছু মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, যেমন বিষণ্নতা, ঔষধ মেনে চলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এমন ঔষধগুলি নিয়মিত না সেবন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষ উদ্বেগ
- সামাজিক কলঙ্ক: বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে কলঙ্কের কারণে অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে চান না। ফলে, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি নিরপেক্ষ থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
- সীमित স্বাস্থ্যসেবা: বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা খুবই সীमित। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সংখ্যা কম এবং অনেক গ্রামীণ এলাকায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না। ফলে, অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকেন।
- আর্থিক বাধা: বাংলাদেশে অনেক মানুষের পক্ষে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নেওয়া আর্থিকভাবে কঠিন। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি নিরপেক্ষ থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে কলঙ্ক দূর করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
- মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সহজ করা: বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। এর জন্য:
- মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বাড়ানো
- গ্রামীণ এলাকায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া
- মানসিক স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমানো
- মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন: মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য:
- মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি
- মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ন্ত্রণ
- মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা উৎসাহিত করা
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ:
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
- ধূমপান ত্যাগ করা
- অ্যালকোহল পান কমানো
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা:
- রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করা
- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
- মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার চিকিৎসা করা:
- বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, চাপ, ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার চিকিৎসা করা
উপসংহার
মানসিক স্বাস্থ্য এবং হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সকলের উচিত মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এই বিষয়ে আরও জানতে আপনি নিম্নলিখিত সংস্থানগুলি দেখতে পারেন:
- বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: https://nimh.gov.bd/
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: https://www.who.int/mental_health/en/
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ: https://www.nimh.nih.gov/