ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ দুটিই গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশে, এই দুই রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডায়াবেটিসের সংজ্ঞা
ডায়াবেটিস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী মেটাবলিক ব্যাধি যা ইনসুলিনের উৎপাদন বা কার্যকারিতা হ্রাসের কারণে ঘটে। ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা শরীরের কোষগুলিকে রক্তে থাকা চিনি (গ্লুকোজ) ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়ে যায়।
হৃদরোগের সংজ্ঞা
হৃদরোগ হল হৃৎপিণ্ডের রোগ যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণ হতে পারে। হৃদরোগ প্রায়শই ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো ঝুঁকির কারণগুলির কারণে হয়।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব
বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশে ১৪.৪ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে ২১.৯ মিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হৃদরোগও বাংলাদেশে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর ৩০%। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে ৩৬%-এ পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মধ্যে সংযোগ
ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ উভয়ই গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু কারণ হল:
- উচ্চ রক্তচাপ: ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।
- উচ্চ কোলেস্টেরল: ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বেশি থাকে। উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগ এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।
- ধূমপান: ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের ধূমপানের ঝুঁকি বেশি থাকে। ধূমপান হৃদরোগ এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।
- স্থূলতা: ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের স্থূলতার ঝুঁকি বেশি থাকে। স্থূলতা হৃদরোগ এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।
অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- বয়স: বয়স্কদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- লিঙ্গ: পুরুষদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি মহিলাদের তুলনায় বেশি।
- পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে হৃদরোগ থাকলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- জীবনধারা: অনিয়মিত খাদ্যাভাস, স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং ধূমপান হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ধূমপান এড়ানো।
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা।
ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগ প্রতিরোধে বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতি ৬ মাস অন্তর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত, যাতে রক্তে শর্করার মাত্রা, কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও গুরুত্বপূর্ণ। লোকেরা এই রোগগুলির ঝুঁকি এবং কীভাবে এগুলি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে জানতে পারলে, তারা তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে পারে।