বিমানে ভ্রমণ করছেন? সুস্থ থাকতে মেনে চলুন বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শগুলো
🔗 সূত্র: American Heart Association News | প্রকাশ: ৪ জুন ২০২৫
ছুটির দিনে প্রিয়জনের কাছে যাচ্ছেন বা বিদেশ সফরে বের হচ্ছেন—বিমানে ভ্রমণ এখন বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানভ্রমণ মোটের উপর নিরাপদ হলেও, এর কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে হলে আগে থেকেই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
বিমানের ভেতরের বাতাস কি ক্ষতিকর?
বিমানের কেবিন সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,০০০–৮,০০০ ফুট উচ্চতার মতো চাপযুক্ত অবস্থায় থাকে। এতে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়।
এই কারণে যাদের অ্যানিমিয়া, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক বা হৃদ্যন্ত্র দুর্বল—তাদের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বিশেষ করে হৃদ্রোগী বা সম্প্রতি বাইপাস সার্জারি যাদের হয়েছে, তাদের আগে থেকেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শুকনো পরিবেশে পানিশূন্যতার ঝুঁকি
বিমানের কেবিনের আর্দ্রতা খুবই কম। ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, কাশি বা গলা খুসখুসে ভাব হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নিজের সঙ্গে পানি বোতল রাখুন এবং তা নিরাপত্তা চেকের পর ভরে নিন।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে আরও পানিশূন্য করে তোলে।
ভাইরাস ও জীবাণুর ঝুঁকি
বিমানের বাতাস সাধারণত ফিল্টার করা হয়, যা বাসা বা অফিসের তুলনায় ক্লিনার।
তবে আশেপাশের যাত্রীর হাঁচি-কাশি থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়।
তাই আপনি চাইলে মাস্ক সঙ্গে রাখতে পারেন, বিশেষ করে কেউ কাশছেন এমন ব্যক্তির পাশে বসলে।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা ও রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি
দীর্ঘসময় না নড়াচড়া করলে ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস (DVT)-এর ঝুঁকি বাড়ে।
এটি মূলত পায়ের বড় শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, যা ফুসফুসে পৌঁছালে মারাত্মক হতে পারে।
তাই মাঝেমধ্যে পা নাড়াচাড়া করুন, পা ক্রস করে বসবেন না, aisle-এ উঠে হাঁটুন এবং প্রয়োজনে কমপ্রেশন সোকস ব্যবহার করুন।
তবে দাঁড়িয়ে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকবেন না—হঠাৎ টার্বুলেন্স বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মানসিক চাপও একটা বড় বিষয়
ফ্লাইট জার্নি অনেকের জন্য চরম মানসিক চাপের। ভিড়, দেরি, নিরাপত্তা—সব মিলে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়।
ডা. লেই স্পাইকার বলেন, “যেখানে ধৈর্য ধরতে হবে, সেখানে রেগে না গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, গান শোনা, ধ্যান—এইগুলো কাজে লাগাতে হবে।”
ভ্রমণে গেলে এমন কাউকে সঙ্গী করুন, যিনি আপনাকে সান্ত্বনা দিতে পারেন।
ওষুধ ও প্রাথমিক প্রস্তুতি
ভ্রমণের আগে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন—বিশেষ করে যদি আপনি হৃদ্রোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী হন।
সব ওষুধ হাতে রাখুন, হ্যান্ড ব্যাগেই রাখুন। নিজের প্রেসক্রিপশন ও ECG রিপোর্টের একটি কপি ফোনে তুলে রাখুন।
পেসমেকার থাকলে এর কার্ড সঙ্গে রাখুন। বিদেশে গেলে ভ্যাকসিন আপডেট আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
ঘুম জরুরি, তবে ঘুমের ওষুধ নয়
নতুন টাইমজোনে যেতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ব দিকে গেলে বেশি সমস্যা হয়।
মাঝ সকালেই রোদে বের হয়ে কিছু সময় কাটান। এতে বডি ক্লক দ্রুত মানিয়ে নেয়।
ঘুমের জন্য নতুন ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। তাই যেটা আপনার অভ্যাস, সেটাই বজায় রাখুন।
আনন্দও কিন্তু বড় ওষুধ!
ডা. লরেন্স স্পারলিং বলেন, “বিমানে ভ্রমণের ভেতরও আনন্দ আছে—পরিবার দেখা, নতুন জায়গা ঘোরা, নতুন অভিজ্ঞতা।”
তাই সতর্কতা মেনে চললেও ভ্রমণের আনন্দ ভুলবেন না।
“ঝুঁকি চিনুন, কিন্তু সেইসঙ্গে জীবনের সৌন্দর্যও উপভোগ করুন”—এই পরামর্শই দিলেন তিনি।
শেষ কথা:
বিমানে ভ্রমণ মানেই শুধু গন্তব্যে পৌঁছানো নয়—স্বাস্থ্য, সচেতনতা ও শান্তির এক সম্মিলিত যাত্রা। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে ঝুঁকি নয়, বরং এই যাত্রা হয়ে উঠতে পারে আপনার জীবনের সেরা স্মৃতিগুলোর একটি। ✈️💓