নীরব ঘাতককে চিনুন—উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন!
উচ্চ রক্তচাপ: নীরব ঘাতক কেন?
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার (Hypertension) এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ধীরে ধীরে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ভয়ঙ্কর দিক হলো—এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না, ফলে মানুষ বুঝতেই পারে না কখন সে হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি জটিলতার ঝুঁকিতে পড়েছে।
তাই একে বলা হয় “নীরব ঘাতক”—চুপিসারে শরীরের ভেতরে কাজ করে, আর এক সময় ভয়ানক ফল নিয়ে আসে।
বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপের চিত্র
- বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৩ জনে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন।
- ৫০% মানুষ জানেই না তারা হাই প্রেশারে আক্রান্ত।
- শহর ও গ্রাম—উভয় জায়গাতেই সমস্যা বাড়ছে।
- অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসা নিলেও নিয়ম মেনে ওষুধ খাচ্ছেন না।
👉 তথ্যসূত্র: WHO ও National Institute of Population Research and Training (NIPORT)
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কী কী?
উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর ফলে হতে পারে—
- হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেলিউর
- স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত
- কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা অন্ধত্ব
- মস্তিষ্কের ক্ষয় (ডিমেনশিয়া)
হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে কী করবেন?
নিয়মিত রুটিন:
- রক্তচাপ মাসে একবার চেক করুন (রোগী হলে প্রতিসপ্তাহে)
- ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত গ্রহণ করুন
- ধূমপান, অতিরিক্ত লবণ, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন
খাওয়াদাওয়ায় সতর্কতা:
- লবণ কমান (প্রতিদিন ৫ গ্রাম বা তার নিচে)
- সবজি, ফল, বাদাম, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ খান
- অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি বর্জন করুন
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন (৮–১০ গ্লাস/দিন)
জীবনধারায় পরিবর্তন:
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট হেঁটে চলুন
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ধীরে উঠুন
- মানসিক চাপ কমান—ধ্যান, প্রার্থনা বা গান শুনুন
- ঘুম ঠিক রাখুন (৬–৮ ঘণ্টা)
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- ঘন ঘন মাথাব্যথা
- বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাসকষ্ট
- চোখে ঝাপসা দেখা
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা হাত–পা ঝিম ধরে যাওয়া
- রক্তচাপ ১৪০/৯০ mmHg এর বেশি থাকলে
উপসংহার: সচেতনতাই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা
উচ্চ রক্তচাপ আজ আর কেবল “বয়স্কদের রোগ” নয়। অল্প বয়সেও অনিয়মিত ঘুম, স্ট্রেস, খাবার ও অলস জীবনধারা এর জন্য দায়ী।
“নিজেকে জানুন, রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ, সচেতনতা আপনাকে বাঁচাতে পারে ভয়ানক পরিণতি থেকে।”
আপনার পরবর্তী করণীয়:
নিজেই একটি ব্লাড প্রেশার মনিটর কিনে নিন
পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাসে একবার চেকআপ করুন
সচেতনতা ছড়িয়ে দিন—আপনি বাঁচলে বাঁচবে অন্যরাও
তথ্যসূত্র: