DALL·E 2024 10 25 00.20.19 An informative illustration showing the increased risk of heart disease due to diabetes. The image includes a heart with blood vessels, showing signs
Featured Health & Wellness

ডায়াবেটিসে হৃদরোগের ঝুঁকি: কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

DALL·E 2024 10 25 00.20.19 An informative illustration showing the increased risk of heart disease due to diabetes. The image includes a heart with blood vessels, showing signs

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। এটি বেশিরভাগ সময় অবহেলিত হলেও, বাস্তবে ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস হৃদপিণ্ডের রক্তনালীগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সময়ের সাথে সাথে এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে যার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য গুরুতর কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই—যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

এখানে আমরা আলোচনা করব কীভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে পারেন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করুন

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য প্রথম এবং প্রধান কাজ হল ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করা। অনেক সময় রোগীরা ওষুধ সঠিকভাবে নেন না বা মাঝখানে বন্ধ করে দেন, যা তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা ধমনীতে ক্ষতি করতে পারে, যা হৃদরোগের মূল কারণ হতে পারে। তাই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্ত প্রয়োজন।

সুষম খাবার গ্রহণ করুন

ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবার বলতে শুধু কম ক্যালোরি এবং কম শর্করাযুক্ত খাবার নয়, বরং প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলে পরিপূর্ণ খাবার গ্রহণ করাকে বোঝায়। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, বাদাম এবং পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। এর পাশাপাশি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিততা আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো হৃদপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন

শরীরচর্চা করা কেবলমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, বরং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। হাঁটাহাঁটি করা রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং ধমনী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরল ও রক্তচাপকে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে সহায়ক। এছাড়া, ব্যায়াম করলে ওজন কমানো সহজ হয়, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ উভয়ের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

রক্তের কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে কোলেস্টেরল ও রক্তচাপের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুষম খাবার গ্রহণ, ওষুধ গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপও হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকি ফ্যাক্টর, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত রাখুন

ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ উভয়েরই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান রক্তনালীর দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কোলেস্টেরল জমতে সহায়তা করে, যা ধমনীতে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। ধূমপান ছাড়লে ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

অ্যালকোহল গ্রহণের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অ্যালকোহল রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমিয়ে বা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা অত্যন্ত জরুরি।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এতে কেবল রক্তে শর্করার মাত্রাই নয়, কোলেস্টেরল, রক্তচাপ, এবং ওজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা যায়। এর পাশাপাশি, হৃদপিণ্ডের অবস্থা নিয়মিত চেক করা উচিত। যদি কোনো ধরনের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো অস্বস্তি হয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস থাকলেও হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এই কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তুললে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা তাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে পারবেন।