সাজিদা একজন কর্মজীবী নারী। তার ব্যস্ত জীবনযাপনের মাঝে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করার সময় খুবই কম। সামান্য ক্লান্তি বা অস্বস্তি অনুভব করলে তিনি তা উপেক্ষা করেন, কারণ এগুলো তার কাছে তেমন গুরুতর কিছু বলে মনে হয় না। কিন্তু একদিন রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় তার ডাক্তার তাকে জানান যে তার ডিসলিপিডেমিয়া আছে। ডিসলিপিডেমিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তের লিপিড বা ফ্যাটের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এটি প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না এবং একমাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই শনাক্ত করা যায়। তবে উপেক্ষা করলে এটি ভবিষ্যতে হৃদরোগসহ বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ডিসলিপিডেমিয়া কী?
ডিসলিপিডেমিয়া (Dyslipidemia) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তের লিপিড বা ফ্যাটের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি অথবা কম থাকে। রক্তের প্রধান লিপিডগুলির মধ্যে রয়েছে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড। যখন এই লিপিডগুলির মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন তা হৃদরোগ এবং অন্যান্য সংবহন সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডিসলিপিডেমিয়া সাধারণত খুব তীব্র না হলে বেশিরভাগ মানুষ এই অবস্থায় ভুগছেন তা বুঝতেও পারেন না। এটি সাধারণত রুটিন রক্ত পরীক্ষার সময় বা অন্য কোনো রোগের পরীক্ষা চলাকালে ধরা পড়ে।
তীব্র ডিসলিপিডেমিয়ার লক্ষণ এবং জটিলতা
ডিসলিপিডেমিয়া যদি তীব্র হয় অথবা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD) এবং পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD) এর মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। CAD এবং PAD উভয়ই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এই অবস্থার সাধারণ লক্ষণগুলি হলো:
- হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময় পায়ের ব্যথা: ডিসলিপিডেমিয়া প্রভাবিত PAD-এর কারণে পায়ে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ কমে যায়, যার ফলে হাঁটার সময় পায়ে তীব্র ব্যথা বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
- বুকের ব্যথা: CAD-এর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ডিসলিপিডেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা বুকে ব্যথা বা অ্যাঞ্জাইনার মতো সমস্যা অনুভব করতে পারেন। এটি বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রমের সময় দেখা যায়।
- বুকে চাপ বা সংকোচন এবং শ্বাসকষ্ট: হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হওয়ার কারণে বুকের চাপ বা সংকোচন অনুভূত হতে পারে। একই সঙ্গে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
- গলায়, চোয়ালে, কাঁধে, এবং পিঠে ব্যথা, চাপ, এবং সংকোচন: CAD এবং PAD-এর কারণে শুধু বুকেই নয়, বরং গলা, চোয়াল, কাঁধ এবং পিঠেও ব্যথা, চাপ, এবং সংকোচন অনুভূত হতে পারে।
- বদহজম এবং হার্টবার্ন: অনেক সময় ডিসলিপিডেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা বদহজম বা হার্টবার্নের মতো সমস্যায় ভুগতে পারেন, যা অন্য কোনো গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা এবং দিনের বেলায় ক্লান্তি: রাতে ভালো ঘুম না হওয়া এবং দিনের বেলায় ক্লান্তি অনুভব করা ডিসলিপিডেমিয়ার আরেকটি লক্ষণ। এটি শরীরে অক্সিজেনের অভাবের কারণে হতে পারে।
ডিসলিপিডেমিয়া একটি নিঃশব্দ স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। একমাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই এটি নির্ণয় করা সম্ভব। যদি এটি দীর্ঘ সময় অপরিচর্যিত থাকে, তবে তা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতা বজায় রেখে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডিসলিপিডেমিয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। তাই যদি আপনি উপরে উল্লিখিত কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।