cath lab machine
Featured Health & Wellness

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উন্নতমানের ক্যাথল্যাব, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং বায়োইকুইভ্যালেন্ট ওষুধের প্রাপ্যতা—দেশের হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা

cath lab machine

বাংলাদেশের হৃদরোগ পরিস্থিতি এখন আর কেবল জনস্বাস্থ্যের উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যখাতের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে মোট মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য অংশই কার্ডিওভাসকুলার রোগের কারণে ঘটছে। তবে আশার কথা হলো, সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে দেশের হৃদরোগ চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মেলবন্ধনে: উন্নতমানের ক্যাথল্যাব, দক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি এবং মানসম্পন্ন বায়োইকুইভ্যালেন্ট ওষুধের সহজলভ্যতা

হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার প্রাণকেন্দ্র হলো ক্যাথল্যাব (Cathlab), যেখানে এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি বা রিং প্রতিস্থাপনের মতো জীবন রক্ষাকারী ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতিগুলো সম্পন্ন হয়। দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বর্তমানে ৮৭টিরও বেশি ক্যাথল্যাব স্থাপিত হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো দ্রুত অত্যাধুনিক ক্যাথল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধিতে প্রথম থেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে, সরকারি পর্যায়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (NICVD) একাধিক উন্নত ক্যাথল্যাব নিয়ে কাজ করছে এবং এর শয্যা সংখ্যা বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর ঢাকাকেন্দ্রিকতা। বেশিরভাগ ক্যাথল্যাবই ঢাকায় অবস্থিত হওয়ায় ঢাকার বাইরের রোগীরা জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার এখন ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জের মতো জেলায় স্থাপিত অব্যবহৃত ক্যাথল্যাবগুলো দ্রুত সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা ঢাকার বাইরের রোগীদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।

ক্যাথল্যাব এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। দেশের অভ্যন্তরেই বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জন তৈরি হওয়ায় হৃদরোগ চিকিৎসায় মানুষের আস্থা বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা দেশের ৯৫ শতাংশের বেশি হৃদরোগীকে সফলভাবে চিকিৎসা দিতে সক্ষম, যার ফলে বিদেশে চিকিৎসার ওপর নির্ভরতা কমছে। NICVD-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে এই খাতেও ঘাটতি রয়েছে; বিশেষত কার্ডিয়াক সার্জারির ক্ষেত্রে। প্রতি বছর দেশে ২৫ হাজার সার্জারির প্রয়োজন হলেও হয় মাত্র ১০-১২ হাজারটি। এর প্রধান কারণ হলো ঢাকার বাইরে বিশেষজ্ঞ সার্জন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বগুড়া, রাজশাহী ও দিনাজপুরে হৃদরোগ চিকিৎসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে, যা ধীরে ধীরে সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে।

হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে ওষুধের সহজলভ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বায়োইকুইভ্যালেন্ট (Bioequivalent) ওষুধ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলো উৎপাদন করছে। এই দেশীয় ওষুধগুলো তুলনামূলকভাবে কম দামে এবং দেশের সব জায়গায় সহজে পাওয়া যায়, যা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। পাশাপাশি, সরকার স্টেন্ট বা রিং-এর দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার খরচ কমাতে আরও সহায়তা করবে।

মোটকথা, উন্নত ক্যাথল্যাব, বিশেষজ্ঞের দক্ষতা এবং সাশ্রয়ী ওষুধের এই সমন্বিত শক্তিই বাংলাদেশের হৃদরোগ চিকিৎসাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি সকল উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সেবাকে ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত করতে পারলে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং দেশের আপামর জনগণ মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা পাবে।