সুস্থ হৃদয় মানে সুস্থ জীবন। ২০২৪ সালের বিশ্ব হার্ট দিবসে আমরা সকলেই একসঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারি হৃদরোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেক সময়েই নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে তেমন মনোযোগ দিই না। অথচ, হৃদরোগ আজকের দিনে একটি ভয়াবহ বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা বয়স নির্বিশেষে সকলকে প্রভাবিত করছে।
বিশ্ব হার্ট দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো হৃদয় সংক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা। এদিনে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম, সেমিনার, এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা আয়োজন করা হয়, যার মাধ্যমে মানুষকে হৃদয় সুস্থ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এই সচেতনতা শুধুমাত্র একটি দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের উচিত প্রতিদিনই নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সঠিক পথ
হৃদরোগ প্রতিরোধে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু সাধারণ পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের উপর নির্ভর করে না, বরং মানসিক শান্তি ও প্রশান্তিরও একটি বিশাল প্রভাব রয়েছে হৃদয়ের স্বাস্থ্যের ওপর। আসুন, আমরা হৃদরোগ প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করি:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন তাজা ফল, সবজি, পূর্ণ শস্য, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, এবং প্রোটিন থাকতে হবে। অতিরিক্ত তেল, লবণ, এবং চিনি গ্রহণ হৃদয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত, জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাদ্যাভ্যাসে এই ধরনের খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। হৃদয়কে সুস্থ রাখতে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, বাদাম, এবং বীজ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করলে হৃদয় শক্তিশালী হয়। হাঁটা, সাইক্লিং, দৌড়ানো কিংবা যোগব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৩. মানসিক শান্তি বজায় রাখা: মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং দুশ্চিন্তা হৃদয়ের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আজকের দিনে কাজের চাপ এবং ব্যক্তিগত জীবনের উদ্বেগের কারণে অনেকেই মানসিক অশান্তির শিকার হন। তাই মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। মানসিক শান্তি বজায় রাখা হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলো থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং হৃদয়ের সুরক্ষায় এগুলো পরিহার করাই শ্রেয়। ধূমপানের কারণে রক্তনালী সংকুচিত হয়, ফলে রক্তপ্রবাহে সমস্যা দেখা দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। একইভাবে, অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
হৃদরোগের লক্ষণগুলি চিহ্নিত করুন
হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সঠিক সময়ে চিহ্নিত করতে পারলে তা প্রতিরোধের সুযোগ অনেক বেড়ে যায়। হৃদরোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব করা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, এবং অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময়ই আমরা এসব লক্ষণকে তেমন গুরুত্ব দিই না, অথচ সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে হৃদরোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।
হৃদরোগ প্রতিরোধের প্রতিজ্ঞা
বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ আমাদের সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। এদিনে আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে পারি। হৃদয়কে সুস্থ রাখতে আমাদের উচিত দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং মানসিক প্রশান্তির চর্চা করা।
একটি শক্তিশালী হৃদয়ের প্রতিজ্ঞা আমাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
Source: https://www.prothomalo.com/bangladesh/90gs82wneu https://www.nhs.uk/conditions/coronary-heart-disease/prevention/