ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক একটি গুরুতর ঝুঁকি। ডায়াবেটিসের কারণে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে হৃদরোগের লক্ষণগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। এ কারণে, ব্যথা বা অস্বস্তি ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, যা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হঠাৎ মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হতে পারে। তাই, ডায়াবেটিস থাকলে আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের বিপদ
সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা বা চাপ অনুভূত হয়। কিন্তু ডায়াবেটিস নার্ভকে দুর্বল করে, যার ফলে হৃদপিণ্ডে অক্সিজেনের অভাব ঘটলেও শরীর তা ঠিকমতো সংকেত দিতে পারে না। এভাবে ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক ঘটে যায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। সময়মতো লক্ষণ না বুঝতে পারার কারণে অনেকেই সঠিক চিকিৎসা নিতে দেরি করেন, যা হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
যেহেতু সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের সময় ব্যথা বা সাধারণ হৃদরোগের লক্ষণগুলো অনুভূত হয় না, তাই এই অ্যাটাক চেনা অনেক কঠিন। তবে কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দেয়। যেমন:
অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা: আপনি যদি কোনো কারণ ছাড়াই অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে শক্তির অভাব দেখা দেয় এবং হৃদপিণ্ডের রক্তপ্রবাহের সমস্যা থাকলে এই ক্লান্তি আরও বাড়তে পারে।
বুক জ্বালাপোড়া: অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির মতো মনে হতে পারে। কিন্তু এই অনুভূতিগুলো আসলে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
পায়ে ফোলাভাব: যদি আপনার পায়ে বা গোড়ালিতে হঠাৎ করে ফোলাভাব দেখা দেয়, তবে এটি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা সঠিকভাবে না হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের সময় এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হওয়া: শ্বাসকষ্টও সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ। যদি হঠাৎ করে আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা তীব্র শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন, তাহলে এটি হৃদরোগের সংকেত হতে পারে।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হলে আপনার করণীয় কী?
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো শনাক্ত করা কঠিন হলেও, সতর্ক থাকলে কিছুটা হলেও সম্ভাবনা কমানো সম্ভব। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
যদি আপনি মনে করেন আপনি সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন, তাহলে অবিলম্বে একজন কার্ডিওলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। প্রাথমিকভাবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ শনাক্ত করতে পারলে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিলে আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এবং ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করা সম্ভব।
কিভাবে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচবেন?
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ওষুধ এবং ইনসুলিন সঠিকভাবে গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, যা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা: উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকি ফ্যাক্টর। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা: ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই এগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সবসময়ই একটি বড় চিন্তার বিষয়। যদিও এটি ব্যথা বা সাধারণ লক্ষণ ছাড়া ঘটে থাকে, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিয়মিত চেকআপ করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া—এই কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তুললে ডায়াবেটিস রোগীরা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।