DALL·E 2024 10 06 13.27.15 A detailed and informative illustration showing how bad cholesterol (LDL) increases the risk of heart disease and stroke. The image includes a visual
Featured Health & Wellness

হার্টের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল: এলডিএল এবং হৃদরোগের ঝুঁকি

DALL·E 2024 10 06 13.27.15 A detailed and informative illustration showing how bad cholesterol (LDL) increases the risk of heart disease and stroke. The image includes a visual

খারাপ কোলেস্টেরল, বা এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি রক্তনালীতে জমা হয়ে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বর্তমান সময়ে হৃদরোগ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি এবং এর পেছনে খারাপ কোলেস্টেরল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এই কোলেস্টেরল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনার উপায়গুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কীভাবে কাজ করে?

খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) যখন রক্তপ্রবাহে থাকে তখন এটি ধীরে ধীরে রক্তনালীর দেয়ালে জমা হতে শুরু করে। এই জমা হওয়া কোলেস্টেরল সময়ের সাথে সাথে “প্লাক” তৈরি করে যা রক্তনালীগুলোকে সরু করে দেয়। এর ফলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত এবং অক্সিজেন পৌঁছাতে সমস্যা হয়। যখন এই প্লাক ভেঙে যায় বা সম্পূর্ণরূপে রক্তনালী বন্ধ করে ফেলে তখন হৃদরোগের ঘটনা ঘটে যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মত জীবনঘাতী সমস্যা তৈরি করতে পারে।

LDL বৃদ্ধির কারণসমূহ

খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি সাধারণত আমাদের জীবনযাত্রার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস এবং অতিরিক্ত ওজন LDL বৃদ্ধির প্রধান কারণ হতে পারে। এছাড়া বংশগত কারণেও অনেকের রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস যেমন চর্বি এবং শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে LDL-এর পরিমাণ বেড়ে যায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

LDL কমানোর উপায়

খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমানো গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এখানে কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে এই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ। খাবারের পরিমাণ এবং গুণগত মান দুটোই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এলডিএল কমাতে প্রধানত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করা প্রয়োজন যা সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজা খাবার, এবং চর্বি-সমৃদ্ধ খাবারে পাওয়া যায়। এর পরিবর্তে, বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন ওটস, শাকসবজি, ফল, এবং পূর্ণ শস্য খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি সংগ্রহ করতে হলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ (বিশেষত সালমন এবং টুনা), বাদাম, এবং বিভিন্ন বীজ ভালো উৎস হতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর তেল যেমন জলপাই তেল এবং অ্যাভোকাডো তেল ব্যবহার করা উচিত, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদয়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কেবল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় না, এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে, শরীরে বাড়তি ওজন থাকলে এলডিএল-এর মাত্রা বেড়ে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ে। সঠিক ওজন বজায় রাখা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান উপায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যালরি গ্রহণ কমিয়ে স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য নির্বাচন করা প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, এবং উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। পাশাপাশি, শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক কার্যক্রম এলডিএল কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়মিত ৩০ মিনিটের ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটা আপনার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভাল কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়, যা এলডিএল-কে নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। প্রতিদিনের হালকা ব্যায়াম হৃদয়ের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং প্লাক তৈরি রোধ করে।

যারা সারা দিন বসে কাজ করেন বা শারীরিক কার্যক্রম কম করে থাকেন, তাদের জন্য ব্যায়াম করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম কেবল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে না, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো, এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

৪. ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা: ধূমপান কেবল ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি হৃদয়ের স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। ধূমপান রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তপ্রবাহে সমস্যা দেখা দেয় এবং কোলেস্টেরল জমা হতে শুরু করে। একইভাবে, অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ায়।

ধূমপান ও মদ্যপান ছেড়ে দিলে ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়ে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই সুস্থ হৃদয়ের জন্য এই অভ্যাসগুলো থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি।

হৃদরোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি

এলডিএল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট পরিবর্তন, যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, এবং জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা আনা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। হৃদয়কে সুস্থ রাখতে হলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং কোলেস্টেরল পরিমাপ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যাদের পারিবারিকভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি প্রয়োজনীয়।

খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলেও এটি প্রতিরোধযোগ্য। সচেতন জীবনযাত্রা এবং সঠিক অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা এলডিএল-এর মাত্রা কমিয়ে আমাদের হৃদয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা কেবল এলডিএল কমাবে না, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটাবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের হৃদয়ের যত্ন নিই এবং সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন যাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

Source: https://www.bhf.org.uk/informationsupport/conditions/angina?fbclid=IwY2xjawFpi6xleHRuA2FlbQIxMAABHc3ONMFmOjrzUMXyaitiGPgtHrbV5xO1N7aj0_DD3XIo0LXeeTlr8j_VKQ_aem_mZxJnMzLybpF2UnXt2sN3w#Heading2