Leonardo Phoenix Angina is an early symptom of heart disease t 0
Featured Health & Wellness

অ্যানজাইনা: হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও সচেতনতা

Leonardo Phoenix Angina is an early symptom of heart disease t 0

অ্যানজাইনার ঝুঁকির কারণ সমূহ

হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে অ্যানজাইনার উপস্থিতি একটি গুরুতর সংকেত। এটি মূলত করোনারি হার্ট ডিজিজের একটি অংশ এবং এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে সমস্যা দেখা দেয়। অ্যানজাইনা হলে বুকের মাঝখানে চাপ, ভারী অনুভূতি বা ব্যথার মতো লক্ষণ প্রকাশিত হয়, যা শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময় বাড়তে পারে। তবে, এটি হৃদরোগের আগের সংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে, তাই এর ঝুঁকি কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যানজাইনার ঝুঁকির কারণসমূহ

আসুন জেনে নিই কোন কোন কারণে অ্যানজাইনার ঝুঁকি বাড়ে এবং কীভাবে এগুলো আপনার হৃদয়কে প্রভাবিত করতে পারে।

১. উচ্চ কোলেস্টেরল

উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এলডিএল (LDL) বা খারাপ কোলেস্টেরল রক্তনালীগুলোর মধ্যে জমা হয়ে তা সংকুচিত করে ফলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি হৃদয়ের পক্ষে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে যা হৃদরোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা জরুরি। চর্বি ও শর্করায় উচ্চ খাদ্য এড়ানো এবং সবজি, ফল, ও মাছের উপর গুরুত্ব দেয়া কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে।

২. ডাইবেটিস

ডাইবেটিসের ফলে শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হয় যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যা অ্যানজাইনার লক্ষণ তৈরি করতে পারে। গ্লুকোজের উচ্চ মাত্রা হৃদয়ের স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে এবং ফলস্বরূপ শারীরিক পরিশ্রমের সময় অ্যানজাইনার উপসর্গ বৃদ্ধি পায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো আবশ্যক।

৩. ধূমপান

ধূমপান হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি রক্তনালীর স্বাস্থ্যকে খারাপ করে এবং রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস করে। ধূমপান করার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি যেমন বেড়ে যায়, তেমনই অ্যানজাইনার লক্ষণগুলোর তীব্রতা বাড়ে। ধূমপান রক্তনালীর সংকোচন ঘটায় এবং রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে যা শারীরিক পরিশ্রমের সময় অ্যানজাইনার উপসর্গকে তীব্র করে। সুতরাং, ধূমপান ত্যাগ করা হৃদরোগ প্রতিরোধের একটি কার্যকরী উপায়।

৪. মানসিক চাপ

বর্তমান জীবনে মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা। কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ মানসিক চাপ হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং অ্যানজাইনার উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে। মানসিক চাপের ফলে হৃদপিণ্ড দ্রুত কাজ করে যা সময়ের সাথে সাথে তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং মেডিটেশন বা ইয়োগার মতো শিথিলতার পদ্ধতি গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, ভালো ঘুম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো সম্ভব।

৫. পারিবারিক ইতিহাসে হৃদরোগ

যদি আপনার পরিবারে কেউ হৃদরোগের শিকার হন তাহলে আপনার ঝুঁকি বাড়ে। আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য ইতিহাস জানার মাধ্যমে আপনি নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের রোগ ইতিহাস এবং তাদের চিকিৎসার পদ্ধতি জানা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার হৃদয়ের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।

৬. উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে বাধ্য করে এবং রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে। উচ্চ রক্তচাপের ফলে অ্যানজাইনার উপসর্গগুলো বাড়তে পারে কারণ হৃদয়ের কার্যক্ষমতা কমে যায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। যদি প্রয়োজন হয়, ডাক্তার দ্বারা prescribed ওষুধ গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

 

অ্যানজাইনা এবং প্রতিকার

অ্যানজাইনার ঝুঁকির কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা আপনার হৃদয়ের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে:

  • সাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: শাকসবজি, ফলমূল, এবং সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করুন। চর্বি ও চিনি থেকে দূরে থাকুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের শারীরিক কার্যকলাপ করুন, যা আপনার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক।
  • মানসিক চাপ পরিচালনা: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং শিথিলকরণ কৌশল ব্যবহার করুন।
  • ধূমপান পরিহার: ধূমপান ত্যাগ করুন এবং অ্যালকোহলের পরিমাণ কমান।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

অ্যানজাইনার ঝুঁকি বোঝা এবং তা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরি। উচ্চ কোলেস্টেরল, ডাইবেটিস, ধূমপান, মানসিক চাপ, পারিবারিক ইতিহাসে হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ—এই সব বিষয়গুলো হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আজই আপনার হৃদয়কে সুস্থ রাখতে সচেষ্ট হন এবং অ্যানজাইনার লক্ষণগুলো থেকে দূরে থাকুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে আপনি আপনার হৃদয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারেন, যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Source: https://www.bhf.org.uk/informationsupport/conditions/angina?fbclid=IwY2xjawFpkv5leHRuA2FlbQIxMAABHVR4PgXw_VBn1H2GEK1ZUqoFmXtAXefX9RAxna-yXteTCiL4M8rPe6s0KQ_aem_vVyb2O89sjz5thHcsqCTtA#Heading2